Truly touching write up by Ayushi Chakraborty
সঞ্চয় কাকে বলে? উপার্জন কি? লাভ কি? স্ট্যাটিসটিক্স দেখাবে সংখ্যার হিসেব।নোটের সংখ্যা।জীবনের স্ট্যাটিসটিক্সও দেখাবে সংখ্যার হিসেব।তবে তা মাথার সংখ্যা। আপনার শেষ দিনে ক'টা মাথা আপনার মৃতদেহের পাশে এসে জড়ো হল,কতগুলো চোখের কোণ চিকচিক করে উঠলো,ক'জন মানুষ শেষ দেখা না পেয়ে হা-হুতাশ করলো;সেইটুকুই আপনার সঞ্চয়। বাকিটা হস্তান্তর,তবিলদারি।জুবিন গর্গ দেখিয়ে দিলেন তিনি কতটা সঞ্চয়ী, কতটা বিত্তশালী,কী অসীম ধনে ধনী!মেঘালয়ের মতো ছোট্ট একটা রাজ্যের ছোট্ট পাহাড়ি শহর 'তুরা'-র মাঝারি গড়নের রোগা ছিপছিপে ছেলেটির মৃত্যু মিছিল Limca Books of Record- এ পৃথিবীর মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম!পোপ জন পল দ্বিতীয়,রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ,মাইকেল জ্যাকসনের পরেই। একবার ভাবুন তো!তাঁকে ঘিরে আসামে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোকপালন। স্কুল, কলেজ,অফিস-আদালত বন্ধ।পরীক্ষা বাতিল।হ্যাঁ, জনজীবন খানিক বিধ্বস্ত হবে ঠিকই, কিন্তু এই চিত্র বলে দেয় তাঁর চলে যাওয়ার থেকে বেশি বিধ্বস্ত নয়।শুধুই শিল্পী বলে? না, তিনি শুধু শিল্পী ছিলেন না। ছিলেন একজন মানবিক শিল্পী।শিল্পীজীবনের আলোর ঝলকানির উল্টোদিকটা তো আসলে ভয়াবহ। এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তো আরও। আজ পারফর্ম না করতে পারলে,কাল মানুষ ঘাড় ধরে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেবে।সেখানে এতদিন ধরে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও,পেশাদারিত্বপূর্ণ উপস্থাপনা না থাকা সত্ত্বেও জুবিনকে লোকে মাথায় তুলে রাখতো।একটাই কারণ তিনিও মানুষকে মাথায় করে রাখতেন।তিনি জানতেন না তিনি জুবিন গর্গ। খাইয়ে দিলে খেতেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে শিশুর মতো কেঁদে উঠতেন। মাঝরাতে মালিকের হাতে প্রত্যহ ধর্ষিতা নাবালিকাকে হিরোর মতো অন্ধকার রাস্তা থেকে উদ্ধার করতেন, অবলা পশুদের আশ্রয় হতেন, দীন-দুঃখীদের সর্বস্ব দিয়ে পাশে দাঁড়াতেন।ভাঙাচোরা পাইস হোটেলের টলমলে মাচার ওপর বাবু হয়ে বসে আঙ্গুল চেটে মাছের ঝোল আর ভাত খেতে তাঁর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেইম কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।মুম্বইয়ের যান্ত্রিকতার সাথে তার নিষ্পাপ পাহাড়ি মন আপোষ করে উঠতে পারতোনা,তাই মুম্বই তাঁকে লুফে নিতে চাইলেও তিনি চেয়েছেন 'মরলে নিজের জায়গায় রাজার মতো মরতে'। কেরিয়ার থেকে চারটে গান বাদ গেলে তাঁর আফসোস হয়নি, কিন্তু জীবন থেকে চারটে ভালোবাসার মুহূর্ত বাদ গেলে তিনি অস্থির হয়ে উঠেছেন। তাঁর সাথে মানুষ কানেক্ট করতে পারতেন। একটা 'মায়া', একটা 'আকুতি' ছিল তাঁর দৃষ্টিতে। যেন এই কলুষিত পৃথিবীর জন্য তিনি একটু বেশিই পবিত্র।প্রতিনিয়ত ফিট ইন করার লড়াইয়ে ক্লান্ত। করেনওনি। যা ভেবেছেন,বলেছেন। ভরা মঞ্চে জামা তুলে দেখিয়েছেন তিনি বামুন হয়েও পৈতে ধারণ করেননা আর মুক্তকণ্ঠে বলেছেন, "মোৰ কোনো জাতি নাই, মোৰ কোনো ধর্ম নাই, মই মুক্ত।"
একটা স্ট্যাটিসটিক্স এর কথা দিয়েই শেষ করি। জুবিনকে নিয়ে এই উন্মাদনা জানতাম কিন্তু আরও জোরালোভাবে অনুভব করলাম গত দুদিনে। আমি একটা সাধারণ ছবি পোস্ট করেছি একদিন আগে। খুব ছোট্ট করে একটা ক্যাপশন দিয়ে। কোথাও কাউকে ট্যাগও করা নেই। এই একদিনে,এই মুহূর্ত অবধি সেই ছবিতে ৭.৬টা লাইক আর ৯৩ টা শেয়ার!আমাকে অন্য দেশ থেকে মানুষ ইনবক্স করছেন আমি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি কিনা,যদি চিনি,যেন তাঁর শেষকৃত্যটুকু ভিডিও করে তাঁকে পাঠাই।না,আমার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পোস্টটিও আজ অবধি ৫০০ লাইক ছাড়ায়নি আর আমি তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নই কিন্তু জুবিনের এই প্রাপ্তির আলো আমি আমার গায়ে মাখবো কি করে?!তাই তাকেই উৎসর্গ করলাম তাঁর ভাগের এই ভালোবাসা।
ভালো থাকুন,নর্থ-ইস্ট-এর 'রাজপুত্র'।
You shall be remembered in music, memories and a billion heartbeats.
No comments:
Post a Comment